রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল বা স্যাট । শুধু এই রায় দিয়ে স্যাট থামেন নি ,স্যাট জানিয়েছে যে সর্বভারতীয় স্তরে মূল্য সূচকের (cpi) ভিত্তিতে তিন মাসের মধ্যে মহার্ঘ ভাতার নতুন হার ঘোষণা করতে হবে। ৬ মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।পে কমিশনের আগে মিটিয়ে দিতে হবে সমস্ত বকেয়া।
এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হল ষষ্ঠ পে কমিশনের সঙ্গে বর্ধিত হারে ডিএ দেওয়া কি এখন রাজ্যের পক্ষে সম্ভব ?
সূত্র মারফৎ খবর, চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরু থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা হবে অর্থাৎ রাজ্যের কর্মচারীরা বর্ধিত বেতন হাতে পাবনে । এবং পে কমিশনের রিপোর্ট জমা পরতে পারে এই মাসেই। ফলে একদিকে ডিএ নিয়ে কোর্টের রায় এবং পে কমিশন উভয়ই বাস্তবায়িত করতে গেলে রাজ্যের বিপুল অর্থের প্রয়োজন। স্যাটের রায় অনুযায়ী কর্মচারীদের প্রাপ্য মেটাতে গেলে চরম সংকট তৈরি হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
ডিএ মামলার রায় ঘোষণার পর মধ্যমগ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী।ঐ দিন সভায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের কথাও শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর কথায়।
এখন সরকারের ডিএ দেওয়ার থেকেও পে কমিশন লাগু করাই প্রধান লক্ষ্য। সরকারি কর্মচারীদের মহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে যে, ষষ্ঠ বেতন কমিশনে মূল বেতনের সঙ্গে ডিএ মিশিয়ে দেওয়া হবে কি ? না কি বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগেই ডিএ ঘোষণা করে দেবে নবান্ন?
বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন এবং রাজনৈতিক মহলের ধারনা যে, স্যাট যে রায় দিয়েছে তার সঙ্গে বেতন কমিশনের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে কেন্দ্রিয় হারে (বছরে দু’বার মহার্ঘ ভাতা ) দেওয়ার যে কথা ট্রাইবুনাল বলেছে সেটা বেতন কমিশনের সুপারিশে রাখা যায় কিনা সেটা কমিশনের রিপোর্ট যেহেতু জমা এখনও পরেনি তাই সেটা অবশ্যই কমিশনের চিন্তা ভাবনার মধ্যে থাকা দরকার।
তবে বিভিন্ন মহলের দাবি যে ডিএ দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে কখন,কবে, কোন হারে ডিএ দেওয়া হবে সেটার একটা নির্দিষ্ট সুত্র সরকারের থাকে ।
একদিকে দীর্ঘদিন ধরে পে কমিশনের রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে যা অনেকটাই সম্পূর্ণ এবং মনে করা হচ্ছে এই মাসেই সেই রিপোর্ট জমা করবেন পে কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার ।
দিল্লিতে নিযুক্ত রাজ্য কর্মীদের এবং চেন্নাইয়ে ইয়ুথ হস্টেলের কর্মীদের এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পেয়ে যাচ্ছেন । তাঁদের ডিএ এর হার ১৫৪ শতাংশ এবং বর্তমানে এখন রাজ্যের কর্মীরা এখন ১২৫ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন ফলে রাজ্যের কর্মচারীদের মধ্যেই ডিএ এর ফারাক প্রায় ২৯ শতাংশ। ফলে স্যাট এর রায়ের ফলে ঐ ২৯ শতাংশ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়া হবে , সেটাই এখন বড় প্রশ্ন কর্মচারীদের মধ্যে । কারণ এই ২৯ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটাতে গেলে রাজ্য সরকারের খরচ হতে পারে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা মতন । আবার পে কমিশন লাগু করতে সরকারের এই মুহূর্তে খরচ হতে পারে প্রায় ১২ হাজার কোটির মতন । ফলে রাজ্যের পক্ষে ডিএ এবং পে কমিশন উভয় মেটানো একপকারে প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছে ।
তবে এই অসম্ভব এর মাঝেও একটা ক্ষীণ আসার আলো আছে ১৭ ই অগাস্ট তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল মনে করছেন সেই দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ,পে কমিশন -সহ বেশ কিছু ঘোষণাও করতে পারেন !