বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মাঝেই ভাতা বাড়ল পঞ্চায়েত সদস্যদের । পঞ্চায়েতের ১৪টি পদেই ভাতা বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী । এদিকে ১১ দিনে পড়েছে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (UUPTWA) অনশন কর্মসূচি । কারণ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরও কাটেনি জট । উলটে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্থিক অবস্থার কারণে দাবিমতো বেতন বাড়ানো সম্ভব নয় ৷
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে সমাধানসূত্র মেলেনি। বরং, অনশনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সোমবার স্কুলশিক্ষা দপ্তর কোনও ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ না-করায়, দু’পক্ষের টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়েছে। বিকাশ ভবনের কাছেই ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে অনশনরত ১৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে দু’জনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এগারো দিন লাগাতার অভুক্ত থাকার ফলে ভাঙছে অনশনকারী শিক্ষকদের শরীর ৷ চিকিৎসকেরা এদিন অনশনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, ১৪ জনের শরীরে কিটোন বডির পরিমাণ বিপদমাত্রা ছাড়িয়েছে ৷ তাদের মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই হাসপাতালে স্থানান্তির করা হবে বলে খবর ৷ তাদের জায়গায় অনশনে বসবেন আরও ১৪ জন আন্দোলনকারী শিক্ষক বলে জানা গিয়েছে ৷
গত একুশে জুলাই ধর্মতলায় শহিদ স্মরণ সমাবেশে শিক্ষকদের এই আন্দোলন নিয়ে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখছি কাজ নেই-কর্ম নেই, বসে পড়ছে রাস্তায়। সবাইকে টাকা দাও আর কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে দাও।’’ , ‘‘যাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে চান, তাঁরা কেন্দ্রে চলে যান, দিল্লির চাকরি করুন। আমার কোনও আপত্তি নেই, আমি খুশি হব।’’
কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমান নয় যোগ্যতা অনুসারে বেতন চাইছেন । রাজ্যে এই মুহূর্তে কেউ এনসিটিই-র বিধি মোতাবেক যোগ্যতা মেনে প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দিলে ৫,৪০০-২৫২০০ বেতন কাঠামো ও গ্রেড পে ২৬০০ টাকা হিসাবে, হাতে পান ২১,৫১৬ টাকা। আর সর্বভারতীয় হারে বেতন কাঠামো ৯৩০০-৩৪,৮০০ টাকা ও গ্রেড পে ৪২০০ টাকা হলে এখনই ন্যূনতম বেতন ৩২,৩৯৫ টাকা এই বৈষম্য থাকা উচিত নয় ।যেহেতু যোগ্যতা মান একই তাই বেতন কাঠামো একই হাওয়া উচিত।
এই দিকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন কমিশন নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়েছে রবিবারের সমাবেশের পরে । ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ সাড়ে তিন বছরেও নবান্নে জমা না পড়ায় এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ এমনিতেই তীব্র ছিল কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি সংগঠন জানতে পারে যে, জুলাই মাসেই জমা পড়বে বেতন সংস্কারের সুপারিশ ! এবং রাজ্যের কর্মচারীদের বেতন সংস্কার কেন্দ্রীয় সরকারের হারের হতে চলেছে বলে বলা হয়েছিল। সে খবর প্রকাশ্যে আসার পরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন সরকারি কর্মীরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রবিবার গত একুশে জুলাই ধর্মতলায় শহিদ স্মরণ সমাবেশে যা বললেন , তা ফের কর্মীদের মনে সংশয় তৈরি করে।
তিনি কি বলেছিলেন যে , “বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ুক, সেই সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ‘সাধ্যমতো’ করবে “। এই ‘সাধ্যমতো’ শব্দের অর্থ কী? প্রশ্ন কর্মীদের।
এখন বেতন কমিশন যদি রিপোর্ট জমা করে তখন রাজ্য সরকার একটা রিভিউ এন্ড পে কমিটি গঠন করবে। তাঁরা ঐ রিপোর্ট দেখে রাজ্য সরকারকে বেতন বৃদ্ধি রিপোর্ট জমা করবে। ভবিষ্যতে দেখা গিয়েছে যে হারে কমিশন বেতন সংস্কারের সুপারিশ জমা করে ঠিক সেই হারে রিভিউ এন্ড পে কমিটি তাঁদের রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা করে ।
অন্যদিকে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে আগামী ২৭ শে জুলাই বেলা ১২ টায় নজরুল মঞ্চে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে । ঐ সভায় প্রধান বক্তা হিসাবে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এখন দেখার বিষয় সেই দিন শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে কোনও আপডেট উঠে আসে কি না।